মাওঃ মুহাঃ ফজলুর রহমানঃ
সমাজবদ্ধভাবে জীবনযাপন করতে গিয়ে নানা শ্রেণির নানা পেশার নানা মত ও পথের মানুষের মুখোমুখি হতে হয়। মুখোমুখি হতে হয় অমুসলিমদেরও। লেনদেন ওঠাবসা চলাফেরা সাহায্য-সহযোগিতা ইত্যাদি নানা ক্ষেত্রে একজন মুসলমান ও একজন অমুসলমানের সাক্ষাৎ হতে পারে। কোনো মুসলিমপ্রধান দেশে অমুসলিমদের বসবাস কিংবা কোনো অমুসলিমপ্রধান দেশে মুসলমানদের বসবাস এখন বিচিত্র কিছু নয়। অমুসলিমদের সঙ্গে কেমন আচরণ করতে ইসলাম নির্দেশ দেয়, এ ব্যাপারে আমরা নবীজির ব্যক্তিগত আচরণের মধ্য দিয়েও জানতে পারি। সুন্নাহ ও ইতিহাসে আমরা দেখতে পাই, রাসূলুল্লাহ (সা.) ভিন্ন ধর্মের মানুষকে মানুষ হিসেবে তার প্রাপ্য সম্মান দিতেন। অমুসলিম প্রতিবেশীর সঙ্গে সদাচার করতেন। অমুসলিমরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ইসলাম গ্রহণ করেছে প্রিয়নবী (সা.)-এর চারিত্রিক সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে।একজন কাফের নেতাকে যুদ্ধবন্দি হিসেবে এনে মসজিদে নববীর খুটির সাথে বেঁধে রাখা হলো। রাসূল (সা.) এসে দেখেন, তার হাত খুব শক্ত করে বাঁধা, এতে তার কষ্ট হচ্ছে। এটি দেখে নবী কারীম (সা.) বললেন, তার বাঁধনটা একটু আলগা করে দাও। সাহাবারা তা-ই করলেন। আবদুল্লাহ বিন সালাম ইহুদিদের পণ্ডিত ছিলেন। তিনি নবী কারীম (সা.)-এর জ্ঞান, প্রজ্ঞা, বুদ্ধিমত্তা ও মহানুভবতা দেখে প্রকাশ্যে কালিমা শাহাদাহ পাঠ করে ইসলামে দিক্ষীত হন। এভাবে দলে দলে মানুষ ইসলামধর্ম গ্রহণ করেছে মহানবী (সা.)-এর চারিত্রিক মাধুর্যে বিমুগ্ধ হয়ে।মক্কা বিজয়ের সময় মক্কার চৌকাঠে হাত দিয়ে বললেন, মক্কার লোকেরা, তোমরা আমার কাছে কী আশা কর? তারা বলল, আমরা তোমাকে ভ্রাতুষ্পুত্র হিসেবে আশা করি তুমি আমাদেরকে ক্ষমা করবে। তখন তিনি বললেন, ইউসুফ (আ.) যেভাবে তার ভাইদের কাছ থেকে প্রতিশোধ নেওয়ার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও বলেছিলেন ‘আজ তোমাদের কাছ থেকে প্রতিশোধ নেওয়া হবে না’, তদ্রূপ আমিও তোমাদের ক্ষমা করে দিলাম। যারা জুলুম করতে করতে পিঠ দেয়ালে ঠেকেয়েছে, বরং দেশাত্যাগে বাধ্য করেছে— তাদের সঙ্গে রক্তপাতহীন ক্ষমার দৃষ্টান্ত পৃথিবীর ইতিহাসে নবী-রাসূল ছাড়া আর কারো মধ্যে দেখাতে পারবেন না।
রাসূল (সা.)-এর একজন ইহুদি সেবক ছিল। সে একবার অসুস্থ হয়ে পড়লে নবী কারীম (সা.) তাকে দেখতে তার বাড়িতে গিয়ে তার সেবা-শুশ্রূষা করেন, পাশে বসে সান্ত্বনা দেন। এরপরে তাকে ইসালামের দাওয়াত দেন। তখন সে তার পিতার পরামর্শে কালিমা শাহাদাহ পাঠ করল।
সুতরাং আমাদেরও উচিত ইসলামের নির্দেশনা এবং রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর দেখানো পদ্ধিতিতে অমুসলিম প্রতিবেশীদের সঙ্গে সদাচার করা। । আল্লাহ তাআলা কিয়ামত পর্যন্ত আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিকে শান্ত রাখুন এবং ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত হোক। ধর্মীয় দাঙ্গা ও ফিতনা-ফাসাদ থেকে আমাদেরকে মুক্ত থাকার তাওফিক দান করুন, আমীন।
সহকারী প্রধান শিক্ষক, পশ্চিম বানিয়াখামার দারুল কুরআন বহুমুখী মাদ্রাসা, খতীব বায়তুল আমান জামে মসজিদ, চকমাথুরাবাদ, পিপড়ামারী,হরিণটানা,খুলনা।